ক‌বির ডা‌য়েরী থে‌কে

ঞ্জনা,
য‌দি বহুবছর পর তোমার সা‌থে দেখা হ‌য়ে যায়, দেখা হওয়াটা তো আর অস্বাভা‌বিক না ব‌লো? গোলাকার পৃ‌থিবী‌তে ঘু‌রে ফি‌রে য‌দি আবার আমরা মু‌খোমু‌খি হই কথা বল‌বে তো আমার সা‌থে? না‌কি মুখ ফি‌রি‌য়ে চ‌লে যা‌বে? অপ‌রি‌চি‌তের মত অব‌হে‌লে চ‌লে যা‌বে আমায় ফে‌লে? এই যাহ্! ভুল ব‌লে ফেললাম। ছে‌ড়ে তো আমায় আ‌গেই গে‌ছো। নতুন ক‌রে আর কিভা‌বে ছে‌ড়ে যাবে। যেখা‌নে সম্পর্কই নেই সেখা‌নে ‌বি‌চ্ছে‌দের কি ভয়। সে যাই হে‌াক। দেখা হ‌লে কথা না ব‌লো একটুখা‌নি অন্তত হে‌সো। যেন আ‌মি বুঝ‌তে পা‌রি তু‌মি এখ‌নো আমায় ম‌নে রে‌খে‌ছ। আ‌মি তো কেবল ওটুকুই চে‌য়ে‌ছিলাম। আ‌মি অধম কূলহীন। য‌দি ভা‌লো‌বে‌সে ঘর না বাঁধ‌তে পা‌রো আমার সা‌থে ত‌বে অন্তত ম‌নের কো‌নে ঠাঁই দি‌য়ো। অপূর্ন আ‌মি তোমায় ভা‌লো‌বে‌সে পূর্ন হ‌য়ে‌ছি। ম‌নে প‌ড়ে সেই প্রথম ‌দেখার মুহূর্ত? কোন এক প‌হেলা ফাল্গু‌নে খোঁপায় ফুল জ‌ড়ি‌য়ে বাস‌ন্তি রঙা শা‌ড়ি প‌ড়ে নে‌চে নে‌চে বেড়া‌চ্ছি‌লে তু‌মি। আ‌মি ঝোলা কাঁ‌ধে উদাস ক‌বি টুপ ক‌রে তোমার প্রে‌মে প‌ড়ে গেলাম। তু‌মি জা‌নো ঝোলা কাঁ‌ধে ঘু‌রে বেড়া‌নো এই ভবঘু‌রে ক‌বি তোমায় দে‌খে লি‌খে‌ছিল এক দীর্ঘ ক‌বিতা। অবাক হ‌চ্ছো? বলা হয়‌নি কখ‌নো? হ্যাঁ, ই‌চ্ছে ক‌রেই ব‌লি‌নি। ওগু‌লো তো পাগলা‌মি ছিল। আমার ওই পাগলামী কবিতা প‌ড়ে তু‌মি না আবার আমায় পাগল ভা‌বো তাই!
রঞ্জনা, তোমায় আ‌মি আর কখ‌নো খুঁ‌জে পা‌বো না। কারন তোমার ঠিকানা আমার অজানা। তাই আজ প্র‌তিটা বটতলা প্র‌তিটা পা‌র্কের বে‌ঞ্চি প্র‌তিটা ফুসকার দোকান হ‌য়ে ও‌ঠে আমার আস্তানা। হয়তো কোন এক‌দিন অন্য কারও হা‌তে হাত রে‌খে বস‌বে ওই বটতলায় ওই বে‌ঞ্চি‌তে। ফুসকা খে‌য়ে বি‌চিত্র ভ‌ঙ্গি‌তে ঠোঁট বাঁকা‌বে। আ‌মি তাই দেখব। রঞ্জনা, আ‌মি আজও ঝোলা কাঁ‌ধে ঘু‌রে বেড়াই প্র‌তিটা বসন্ত উৎস‌বে। ‌কিন্তু আ‌মি ক‌বি নই। আ‌মি প্রে‌মিক। আ‌মি ক‌বিতা লি‌খি না। তোমার প্র‌তি আমার ভা‌লোবাসা ছন্দবদ্ধ শব্দ রূ‌পে ডা‌য়েরীর পাতায় নে‌চে বেড়ায়। তু‌মি এ‌কে ক‌বিতা বল‌তে পা‌রো। আ‌মি ব‌লি এ ভ‌া‌লোবাসা। এমনই এক‌ ভা‌লোবাসার বলয় আমা‌কে ঘি‌রে রে‌খে‌ছে। আ‌মি চাই‌লেও বে‌রো‌তে পা‌রি না। আস‌লে আ‌মি বে‌রো‌তেই চাই না। এই নিষ্কর্মা জীব‌নের লম্বা দূরত্বটুকু পে‌রো‌তে হ‌লেও তো একটুখা‌নি ব্যস্ততা দরকার। তু‌মিই নাহয় আমার সেই বাহানা। তোমা‌কে খুঁজ‌তে খুঁজ‌তেই আ‌মি পে‌রি‌য়ে যাব জীব‌নের সীমানা। নাহ্ তোমায় খুঁ‌জে পে‌তে চাই না, চাই না তোমার সাজা‌নো পৃ‌থিবী থে‌কে তোমায় তু‌লে আন‌তে। শুধু তোমায় খুঁজব নি‌জের প্রা‌নের তৃ‌প্তির জন্য। য‌দি কখ‌নো দেখা হয় একবার চোখা‌চো‌খি। কিন্তু কোন বাক্য বি‌নিময় নয়। আ‌মি আবারও হা‌রি‌য়ে যাব। তারপর তোমায় আবারও খুঁজব। খুঁ‌জে খুঁ‌জেই কে‌টে যা‌বে সময়। য‌দিও জা‌নি তোমায় খুঁ‌জে পা‌বো না। এই চি‌ঠিট‌া যেমন লিখ‌ছি তু‌মি কোন‌দিন পড়‌বে না জেনেও। থাকুক এ চি‌ঠিখানা আমার ডা‌য়েরীর পাতায়। তবু আ‌মি লিখ‌ছি। আরও লিখব। আমার অর্থহীন পাগলা‌মিগু‌লো‌ দিন‌শে‌ষে রা‌তের আধাঁ‌রে জোনা‌কি‌ হ‌য়ে আমায় অভয় দে‌বে। ভয় কি ক‌বি! আমরা তো র‌য়ে‌ছি তোমার পা‌শে। কি? ঈর্ষা হয় তোমার?
এখন হয় কিনা জা‌নি না। ত‌বে একসময় তো আমার কল্পনার জোনাকী‌দের তু‌মি ঈর্ষাই কর‌তে, রঞ্জনা। আজ তারাই আমার আ‌ছে। শুধু তু‌মি নেই। আমার জীব‌নে নেই। কিন্তু কোথাও না কোথাও তো অবশ্যই আ‌ছো। কারও না কারও জীব‌নে। কারও ভা‌লোবাসার নিঃশ্বা‌সে আর আমার প্র‌তিটা দীর্ঘশ্বা‌সে। ভা‌লো থে‌কো তু‌মি। আমার হা‌রি‌য়ে যাওয়া রঞ্জনা।
ই‌তি,
‌ঝোলা কাঁ‌ধে ঘু‌রে বেড়া‌নো নির্বাক ক‌বি..

Next Post